প্রকৃতিনির্ভর এই বাংলাদেশে বিভিন্ন ঋতুতে ফোটে নানা রকম ফুল। এসব ফুলের সৌন্দর্যে প্রকৃতি আরও বেশি দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে। প্রকৃতি সাজানো এমনই এক ফুল সোনালু কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার প্রকৃতিকে অলংকৃত করেছে স্বর্ণালি আভায়। সবুজ প্রকৃতিকে রঙিন করে তোলা ঝুমকার মতো ঝুলে থাকা এ ফুলের মোহনীয় রূপে বিমোহিত হচ্ছেন নানা বয়সী মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাশে, জলাশয়ের পাড়ে ও বাড়ির আঙিনায় সোনালি রঙের আভা ছড়িয়ে ফুটে আছে থোকায় থোকায় সোনালু ফুল। এ ফুলের চোখজুড়ানো সৌন্দর্য যেন হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছে ফুলপ্রেমীদের। সবুজ পাতা ছাপিয়ে দৃশ্যমান হওয়া কানের দুলের মতো সোনালি ফুলগুলো দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে পথচারীদের। সোনালু ফুলের অলংকার পরে গ্রীষ্মের প্রকৃতি নতুন রূপে যেন সেজে উঠেছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলকেই আকৃষ্ট করছে এ মনোমুগ্ধকর ফুল। গ্রীষ্মের রোদে এ ফুলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য যেন বেড়ে যায় বহুগুণ। এ ফুল গ্রামীণ প্রকৃতিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। শৌখিন নারীদের চুলের বেণি ও খোঁপায়ও শোভা পাচ্ছে এ দৃষ্টিনন্দন ফুল। শিশুদের কাছেও সোনালু ফুলের বেশ কদর। ঝরে পড়া সোনালু ফুলে খেলা করে শিশুরা।
জানা গেছে, সোনালু এ দেশে একটি পরিচিত গাছ। এ গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাসিয়া ফিস্টুলা। এর ইংরেজি নাম গোল্ডেন শাওয়ার ট্রি। এটি ভারতীয় উপমহাদেশে ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি স্থানীয় উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ। পাঁচ পাপড়ি বিশিষ্ট এ গাছের হলুদ ফুল দেখতে বেশ সুন্দর। মাঝারি আকৃতির এ গাছের উচ্চতা ১০ থেকে ১৫ ফুট হয়ে থাকে। বসন্তে এ গাছ পত্রশূন্য থাকে। বৈশাখে নতুন পাতা গজায় ও এ গাছে ফুল আসে। হলুদ বরণ সোনালু ফুল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি এর আছে বাহারি অনেক নাম। এসব নামের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সোনালু, সোনাইল, সোঁদাল, বান্দরলাঠি। সোনালুর ফুল, ফল ও পাতা বানরের প্রিয় খাবার। এর কাঠের রং ইটের মতো লাল। এই গাছ ঢেঁকি, সাঁকো বানানোর কাজে বেশি ব্যবহার করা হয়।
শোভাবর্ধনকারী গাছ হিসেবে পরিচিতি থাকলেও সোনালু গাছের রয়েছে ব্যাপক ভেষজগুণ। এ গাছের পাতা ও বাকল ডায়রিয়া ও বহুমূত্র রোগে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে এ গাছের বিভিন্ন অংশ ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও চর্মরোগ, গ্যাস্ট্রিক, অ্যাজমা, ক্ষত সারাতে, ইনফেকশন রোধে, বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামড়ের যন্ত্রণা কমাতে, টনসিলের ফুলা সারাতে এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয়। আয়ুর্বেদিক, ইউনানি এবং চাইনিজ ট্র্যাডিশনাল ওষুধে এই উদ্ভিদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
আল-আমীন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, সোনালু ফুল প্রকৃতিতে ফুটলে প্রকৃতি মোহনীয় হয়ে ওঠে। এ ফুল মানুষকে আকৃষ্ট করে তার মনমাতানো সৌন্দর্যে। সোনালি আভায় প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তোলে এ ফুল। এ সময়টায় প্রকৃতির দিকে তাকালে সোনালু ফুলের সৌন্দর্যে মন জুড়িয়ে যায়।
জান্নাতুন নাঈমা ডেইজি নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এ সময়ে প্রকৃতিতে ফোটা ফুলগুলোর মধ্যে সৌন্দর্যবর্ধনে এগিয়ে ঝাড় লুণ্ঠনের মতো সৌন্দর্য নিয়ে থোকায় থোকায় ফোটা সোনালু ফুল। এ ফুল এতো পরিমাণে ফোটে যে গাছের দিকে তাকালে মনে হয় পুরো গাছটাই যেন একটা ফুল। আমার বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ে একটি গাছ আছে। প্রতিদিন সকালে গাছের নিচে গেলে দেখা যায় অসংখ্য ঝরা ফুল মাটিতে পড়ে আছে। এ সুন্দরও কম কিছু নয়।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বন কর্মকর্তা মাহাবুব আলম বলেন, সোনালু গাছ সৌন্দর্য বর্ধনকারী বৃক্ষ হিসেবে অতিপরিচিত। সোনালুর উজ্জ্বল ফুল চমকপ্রদ সুন্দর। এ ফুল মৌমাছি ও প্রজাপতিকে আকৃষ্ট করে। যার ফলে পরাগায়নেও সাহায্য হয়। এ ছাড়া এটি পাখিদের আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। শোভাবর্ধনের জন্য উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাশে সোনালু, কৃষ্ণচূড়া ও পলাশ গাছ রোপণের পরিকল্পনা রয়েছে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা বলেন, সোনালু ফুল প্রকৃতির শোভা বাড়াতে সাহায্য করে। এ ফুলের সৌন্দর্য যে কাউকে সহজেই আকৃষ্ট করে। এ সময়টায় প্রকৃতির মধ্যে এ ফুল রাজত্ব করছে।
তিনি বলেন, সোনালু একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে এ দেশে। এর বাকল, ফুল, ফল ও পাতা মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। ইউনানি ওষুধ হিসেবে এ গাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
দৈনিক ইনাতগঞ্জ বার্তা/ ইকবাল
Leave a Reply