ইনাতগঞ্জ বার্তা ডেস্কঃ লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক’ (আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির। আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নাই। আমি হাজির, নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নিয়ামত তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার। তোমার কোনো অংশীদার নাই)—এই তালবিয়া বা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে আগামী ৫ জুন (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে) অনুষ্ঠিত হবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় মিলনমেলা ও অন্যতম ফরজ ইবাদত হজ। ৯ জিলহজ পবিত্র মক্কা নগরীর আরাফাতের ময়দানে বিশ্বের সব প্রান্তের মুসলমানদের সম্মিলন ঘটে এ ইবাদতের মাধ্যমে, ইসলামে যাকে বলা হয় ‘হজে আকবার’। সোমবার রাত সোয়া ২টায় বাংলাদেশ থেকে ছেড়ে গেছে প্রথম হজ ফ্লাইট। এ বছর বাংলাদেশ থেকে হজ পালনের উদ্দেশে সৌদি আরব যাবেন ৮৭ হাজার ১০০ জন। তাদের মধ্যে ৫ হাজার ২০০ জন যাবেন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকি ৮১ হাজার ৯০০ জন যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। হজ নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) গঠন করেছে ‘হজ টাস্কফোর্স-২০২৫’। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চালু করেছে বিশেষ হজ অ্যাপ। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এবারের হজ হবে নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল। তবে হজ পালনের কর্মসূচি নিয়ে বেশ কিছু জটিলতার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে হজ ফ্লাইট ও বেসরকারি এজেন্সিগুলোর বাড়ি ভাড়ার সময় নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এ ছাড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে অতিরিক্তসংখ্যক হজ ফ্লাইট দেওয়ায় ফ্লাইট শিডিউল নিয়ে জটিলতার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এবার হজ নিয়ে কোনো বিড়ম্বনার আশঙ্কা আছে কি না—জানতে চাইলে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব ফরিদুল আহমেদ মজুমদার কালবেলাকে বলেন, ‘সরকার গৃহীত ব্যবস্থাপনার কারণে এবার হজ নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ হবে এমনটা আমরা আশা করছি। তবে চ্যালেঞ্জ অনেক। সৌদি আরবের পক্ষ থেকেও কিছু সমস্যা রয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে ১১৮টি ফ্লাইট, সৌদিয়া এয়ারলাইন্সকে ৭৯টি ফ্লাইট ও নাস এয়ারলাইন্সকে ৩৪টি হজ ফ্লাইট দেওয়া হয়েছে। বিমানকে সক্ষমতার অতিরিক্ত ফ্লাইট দেওয়ার কারণে সময়ের হেরফের হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এজেন্সি মালিকরা যে সময় বাড়ি ভাড়া করেছেন, হজ ফ্লাইট শিডিউল হয়তো তার আগে পড়েছে। এসব নিয়ে জটিলতা নিরসনে আমরা কিছু হজ ফ্লাইট আগ-পিছ করার কথা বলেছি। সরকারের সঙ্গে জটিলতাগুলো নিরসনে আলাপ-আলোচনা চলছেকোনো এজেন্সির অর্থ আত্মসাৎ করে চলে যাওয়া বা হজযাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া—এ জাতীয় কোনো সমস্যা তৈরি হয়েছে কি না, জানতে চাইলে হাব মহাসচিব বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সে রকম কোনো অভিযোগ পাইনি। পেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।’
জানা গেছে, গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে হজ পালন করেছিলেন সৌদি নাগরিক ও সৌদির বাসিন্দাসহ বিশ্বের ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ১৬৪ ধর্মপ্রাণ মুসলমান। এ বছর ১৯ লাখের বেশি মানুষ হজ পালন করবেন বলে সৌদি আরবের বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেকরা। পরে মিনায় কোরবানি ও মাথা মুণ্ডানো বা চুলকাটার মাধ্যমে হজের আনুষ্ঠানিক সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে।
সৌদি আরবের বিশেষ নির্দেশনা: হজযাত্রীদের জন্য এবার নতুন কিছু নির্দেশনা দিয়েছে সৌদি আরব। গালফ নিউজ বিষয়টি উল্লেখ করে জানিয়েছে, চলতি বছরে হজের উদ্দেশ্যে যেসব যাত্রী বৈধ নথি বা পারমিট ছাড়া সৌদিতে যাবেন, তাদের থাকার জায়গা না দিতে মক্কার সব হোটেল, মোটেল, রেস্টহাউস ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নির্দেশ দিয়েছে সৌদি সরকার। সৌদি আরবের পর্যটন মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে। ২৯ এপ্রিল থেকে এ নির্দেশ কার্যকর করা হচ্ছে। নির্দেশনার মেয়াদ শেষ হবে হজ সমাপ্ত হওয়ার পর। নির্দেশ পালন হচ্ছে কি না, যাচাই করতে মক্কার আবাসিক এলাকাগুলোয় নিয়মিত টহল দেবেন সৌদির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
এতে আরও বলা হয়েছে, জননিরাপত্তা ও হজের পবিত্রতার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মক্কার হোটেল-মোটেল-রেস্টহাউসের মালিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নতুন এ নিয়ম মেনে চলতে আদেশ দিয়েছে সরকার। কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যদি সরকারি আদেশ নাম মানার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছে দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, প্রতি বছর হজের মৌসুমে লাখ লাখ মুসল্লি হজ করতে সৌদি আর গমন করেন। তাদের সবাই যে বৈধভাবে যান, তা নয়। অনেকেই প্রয়োজনীয় নথি ব্যতীত অবৈধভাবে প্রবেশ করেন সৌদিতে। তাদের একটি অংশ আবার স্থায়ীভাবে সেখানেই থেকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এই নথিবিহীন অভিবাসীদের ব্যাপারে কঠোর নীতি নিয়েছে সৌদি আরব। অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। যেসব ওমরাহযাত্রীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাদের ২৯ এপ্রিলের মধ্যে সৌদি ত্যাগের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
২০ ভাষায় প্রচার হবে হজের খুতবা: হজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আরাফাতের ময়দানে দেওয়া হজের খুতবা। ইনসাইড দ্য হারামাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৯ জিলহজ আরাফার ময়দানে মসজিদে নামিরা থেকে আরবি ভাষায় হজের খুতবা দেওয়া হবে। বিশ্বজুড়ে হজের খুতবা বা বয়ান সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। তাৎক্ষণিক বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় হজের খুতবার অনুবাদ করা হয়। প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলাসহ বিশ্বের ২০টি ভাষায় হজের খুতবা অনুবাদ করা হবে। এগুলো হলো—বাংলা, ফরাসি, মালয়, উর্দু, ফারসি, চায়নিজ, তুর্কি, রাশিয়ান, হাউসা, ইংরেজি, সুইডিশ, স্প্যানিশ, সোয়াহিলি, আমহারিক, ইতালিয়ান, পর্তুগিজ, বসনিয়ান, মালায়লাম, ফিলিপিনো ও জার্মান।
Leave a Reply