মৌলভীবাজার প্রতিনিধি।। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় উপজেলার সীমান্ত এলাকার দুই যুবককে কাজের কথা বলে ভারতে পাচারের অভিযোগে মানব পাচার আইনে করা মামলায় পুলিশ রুবেল আহমদ (৩৫) নামে আরো এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। সোমবার বিকেলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার বিবেলে রুবেলকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এর আগে আব্দুল মালিক নামে এক আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।
এদিকে, মানব পাচার মামলার দুই নম্বর আসামি ডিমাই গ্রামের ফখর উদ্দিনের স্ত্রী রুনা বেগম অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার দুপুরে ৫-৬টি মোটরসাইকেলযোগে সাবুল মেম্বার, সুনাম, রিপন, জয়নুলের নেতৃত্বে ১০/১২ জন তাদের বাড়িতে গিয়ে হামলা ও ভাঙচুরের চেষ্টা চালিয়ে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। তাদের মহড়ার ভিডিয়ো ফুটেজ তিনি সংরক্ষণ করেছেন। এব্যাপারে তিনি থানায় মামলা করবেন।
পাচারের শিকার যুবকরা হলেন- উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডিমাই গ্রামের তাজ উদ্দিনের ছেলে মো. আব্দুল কাদির (২৩) ও একই ইউনিয়নের পূর্ব সাতকরাকান্দি গ্রামের আব্দুল শুক্কুরের ছেলে গিয়াস উদ্দিন (৩৫)। কৌশলে ফিরে আসা যুবকের নাম শাহিন আহমদ (১৮)। সে বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ডিমাই গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ৫ এপ্রিল ভোররাতে মামলার এজাহার নামীয় আসামিরা ডিমাই গ্রামের তাজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল কাদিরের বাড়িতে গিয়ে কাজ আছে-জানিয়ে গভীর রাতে আব্দুল কাদির ও তার প্রতিবেশী শাহিন আহমদকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। একই গ্রুপ (আসামিরা) গিয়াস উদ্দিন নামের আরও এক যুবককে তার বাড়ি থেকে ডেকে আনে। পরদিন দুপুরে শাহিন আহমদ আহত অবস্থায় বাড়িতে ফিরে স্বজনদের জানায়, আসামিরা আব্দুল কাদির ও গিয়াস উদ্দিনকে টাকার লোভে অবৈধভাবে ভারত পাঠিয়ে দিয়েছে। অবৈধভাবে ভারত পাঠানোর সময় শাহিন আহমদ আসামিদের কবল হতে কৌশলে পালিয়ে আসলেও আব্দুল কাদির ও গিয়াস উদ্দিন ভারতীয় পুলিশের হাতে আটক হয়। এ ঘটনায় গত রোববার রাতে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মানব পাচার আইনে থানায় মামলা করেন ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার আব্দুল কাদিরের মা নেছা বেগম। মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ আব্দুল মালিক ও রুবেল আহমদ নামের দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।
তবে, স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় গরু-মহিষ চোরাচালানের জন্য তিন যুবককে চোরকারবারিরা ভারতে পাঠিয়েছিল। এদেরকে দুইজনকে ভারতীয় পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। অপর যুবক কৌশলে ফিরে এসে প্রতিপক্ষের চোরাকারবারির বিরুদ্ধে নির্যাতন ও মুক্তিপন দাবির অভিযোগ করায় ভারতে গ্রেপ্তার যুবক আব্দুল কাদিরের মা মানব পাচার আইনে থানায় মামলা করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- বড়লেখা সদর ইউনিয়নের কেছরিগুল গ্রামের সরফ উদ্দিন নবাব (৪০), ডিমাই গ্রামের ফখর উদ্দিন (৩৮), আব্দুল খালিক (৪০), কুটু মিয়া (৩৮), আব্দুল শুকুর (৪০), খয়রুল ইসলাম (৩৯), আব্দুল মালিক (৩৬), কেছরিগুল গ্রামের ইছহাক আলী (৪২), ডিমাই গ্রামের ইমাম উদ্দিন (৪০), গৌরনগর গ্রামের রুবেল আহমদ (৩৫)।
মামলার বাদী নেছা বেগম বলেন, শাহিন ফিরে এসে তাদের উপর চালানো নির্যাতনের খবর জানায়। এরমধ্যে আমার ছেলে কাদির ও গিয়াসের উপর ভারতে নির্যাতন চালানোর ভিডিও ফেসবুকে দেখতে পাই। এরপর আসামিদের অনেক আকুতি-মিনতি করি। কিন্তু আসামিরা আমার নিকট ৬ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে।
বড়লেখা থানার ওসি আবুল কাশেম সরকার জানান, মামলার এজাহার নামীয় আসামি রুবেল আহমদকে গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ পর্যন্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
দৈনিক ইনাতগঞ্জ বার্তা/ ইকবাল
Leave a Reply