প্রধান প্রতিবেদক।।হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের সংযোগ সড়ক পানিউমদা-শমসেরগঞ্জ বর্তমানে পরিণত হয়েছে এক যন্ত্রণার নাম। প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের চলাচল এই সড়ক দিয়ে হলেও বছরের পর বছর সংস্কার না হওয়ায় তা এখন মৃত্যুফাঁদে রূপ নিয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা থেকে মৌলভীবাজার জেলার শমসেরগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার সড়কটিতে খানাখন্দে ভরে গেছে। প্রতিদিন ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে, আহত হচ্ছে পথচারী ও যাত্রীসাধারণ। যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় এ সড়কে চলতে গিয়ে মানুষজন পড়ছেন চরম দুর্ভোগে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ নিয়মিত মাপজোক করে গেলেও বছরের পর বছর ধরে কোনো সংস্কার কাজ শুরু হয়নি। আশ্বাসের ফুলঝুড়ি থাকলেও নেই বাস্তবায়ন। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে।
এই সড়কের গুরুত্ব শুধু স্থানীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়। এটি হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার মানুষের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, অসুস্থ রোগী, দিনমজুর, কৃষক, ব্যবসায়ী—সব শ্রেণির মানুষের যাতায়াত এই পথেই। অথচ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ ও আর্থিক ক্ষতি।
সরাসরি ভুক্তভোগীদের ভাষ্যে উঠে এসেছে বাস্তব চিত্র। স্থানীয় দরাজ মিয়া বলেন, “এই রাস্তা এখন মৃত্যুর ফাঁদ। কিছুদিন আগে সিএনজি উল্টে আমি ও আরও দুইজন গুরুতর আহত হই। চিকিৎসা নিতে হয় সিলেটের হাসপাতালে।”
একই সুরে কথা বলেন আশরাফুল ইসলাম, “আমাদের এই একমাত্র সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করতে গিয়ে কষ্টের শেষ থাকে না। কয়দিন পর পর মাপজোক হয়, কিন্তু সংস্কার আর হয় না।”
বয়স্ক জুয়েল মিয়া বলেন, “সিএনজি দিয়ে বাজারে গেলে শরীরে ব্যথা লেগে যায়, ব্যথানাশক খেতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে যাই।
পিকআপ চালক কুরবান আলী বলেন, “এই রাস্তায় মালামাল নিয়ে চলা যায় না। মাস শেষে গাড়ির যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়, অনেক টাকা খরচ হয় মেরামতে।
আয়-রোজগারেও পড়েছে প্রভাব এই সড়কের কারণে শুধু জীবন নয়, livelihoods বা জীবিকাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সিএনজি চালক কদ্দুছ মিয়া জানান, “রাস্তায় বড় বড় গর্ত হওয়ায় যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে। ফলে আয়-রোজগারও কমে গেছে।”
তবে এলাকাবাসীর দাবি, শুধু প্রাক্কলন নয়, দ্রুত অনুমোদন এবং বাস্তব কাজ শুরু করাই এখন সময়ের দাবি। বর্ষা আসার আগেই যদি সংস্কার না করা হয়, তাহলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
জনগণের প্রশ্ন: একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তঃজেলা সড়ক সংস্কারে এত দীর্ঘসূত্রিতা কেন? উন্নয়ন পরিকল্পনায় কি সাধারণ মানুষের ভোগান্তির মূল্যায়ন হয় না?
পানিউমদা-শমসেরগঞ্জ সড়কের বেহাল দশা আজ শুধু একটি সড়কের দুরবস্থা নয়, বরং তা রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার একটি প্রতিচ্ছবি। বারবার আশ্বাস দিয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অবিলম্বে কার্যকর সংস্কার না হলে এ সড়ক যে বড় কোনো দুর্ঘটনার কারণ হবে না, তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। তাই প্রয়োজন, এখনই পদক্ষেপ নেওয়া—মানুষের ভোগান্তি লাঘবের স্বার্থে, জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে।
প্রশাসনের আশ্বাস, বাস্তবায়নে ধীরগতি এই সড়ক সংস্কার বিষয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মো. জোনায়েদ আলম বলেন, “পানিউমদা-শমসেরগঞ্জ সড়ক সংস্কারের জন্য প্রাক্কলন পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন এলেই সংস্কার কাজ শুরু হবে।”
Leave a Reply