বার্তা ডেস্ক।। ঝাঁকে উড়ে আকাশ জুড়ে, দেখতে কি সুন্দর, জালালী কইতর, জালালের জালালী কইতর’ গানের ছন্দে বাউল আব্দুল হামিদ স্মরণ করিয়ে দেন বিদ্যমান হযরত শাহজালাল (রহ) এর স্মৃতিধন্য ৭০০ বছরের পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী জালালী কবুতরের কথা। দরগাহতে গেলেই দেখা মিলে অসংখ্য রঙ বেরঙয়ের কবুতর। হযরত শাহজালাল (রহ) এর হাত ধরে আসা এক জোড়া কবুতর থেকে দরগাহ যেন রূপ নিয়েছে কবুতরের বিচরণকেন্দ্রে। যা যুগ যুগ ধরে জড়িয়ে আছে সিলেটের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সাথে। কিন্তু দেশীয়সহ অন্যান্য জাতের সাথে জালালী কবুতর মিলে তৈরি হচ্ছে শঙ্কর জাতের কবুতর। এতে মাজারে দিনদিন কমছে হযরত শাহজালাল (রহ) এর হাত ধরে আসা সেই ঐতিহ্যবাহী কবুতর।
ইতিহাসবেত্তাদের মতে, ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে ১৩০০ শতাব্দীর শেষের দিকে ৩৬০ আউলিয়া নিয়ে আসামের শ্রীহট্ট (বর্তমান সিলেট) জয় করার পর আমৃত্যু এখানেই অবস্থান করেন হযরত শাহজালাল (রহ)। পরবর্তীতে আধ্যাত্মিক শক্তির পরিচয়ের ভিত্তিতে হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রহ) এর নিমন্ত্রণে দিল্লী সফরে যান তিনি। সফর থেকে ফেরার পথে নিয়ে এসেছিলেন একজোড়া কবুতর। এ এই কপোত যুগল কবুতরের বংশ বিস্তারের উপর ভর করে শত শত বছরের পরিক্রময়ায় রূপ নিয়েছে বিশাল বহরে।
https://10ms.io/xvfHJ3 https://10ms.io/TvfH13
জানা যায়, শুধুমাত্র সিলেট ও ভারতের দিল্লিতে এই ধরণের কবুতরের দেখা মিলে। যার গায়ের রঙ ধুসর নীল, মাথা গোলাকার ও আকারে ছোট। ঠোট, চোখ ও মাথার অনেকটাই সোনালী মিশ্রণ ও ধূসর রঙয়ের। একেকটা প্রাপ্ত বয়স্ক কবুতরের ওজন ৫০০-৬০০ গ্রামের হয়ে থাকে। তাছাড়া অস্থিত্বের দিক থেকে ও বংশ বৃদ্ধির হিসাবে জালালী কবুতর পাঁচ থেকে দশ বছর বেঁচে থাকে। এসব কবুতরের থাকার জন্যও রয়েছে বিশেষ খোপ বিশিষ্ট ঘর। যুগলবন্দীরা সেখানে তার সঙ্গী বা অন্য কবুতরের সাথে অবস্থান করেন।
স্থানীয়দের দাবী, পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা না থাকায় দিনদিন জালালী কবুতরের সংখ্যা কমছে। বাড়ছে শঙ্কর জাতের কবুতর। এছাড়া দরগাহে গেলে দেখা মিলে রঙ বেরঙয়ের কবুতর, এসবের অধিকাংশ ভিন্ন জাতের কিংবা শঙ্কর জাতের।
তবে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রাণী বিষয়ক সংগঠন এ জালালী কবুতরের সংখ্যা নিরূপণের উদ্যোগ নিলেও এর সঠিক সংখ্যা এখন পর্যন্ত জানা যায় নি।
দরগাহ’র পার্শবর্তী এলাকাবাসী কামিল মিয়া বলেন, আমার জন্মের পর থেকে এখানে এই জালালী কবুতর দেখে আসছি। এরা দেখতে সুন্দর ও শান্ত স্বভাবের। একসাথে থাকতে পছন্দ করে। এছাড়া কবুতর যুগলের মধ্যে অন্যান্য কবুতরের থেকেও বন্ধন দৃঢ়। বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রেও জালালী কবুতর নিজ প্রজাতী অণ্য কোন প্রজাতীয়র কবুতরের সাথে মিলিত হয় না। স্থানীয়রাও এ কবুতরকে একধরণের ঐতিহ্য হিসেবে পালন করে থাকেন।
সিলেটে ঘুরতে আসা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে এ জালালী কবুতর। সরেজমিনে দেখা গেছে, পর্যটকে পর্যটকদের কাছেও ঐতিহ্যবাহী এ কবুতর বেশ আকর্ষণীয়। পর্যটকেরা ঘুরতে এসে এখানে ভিড় জমাচ্ছেন। কেউ কেউ সেলফি তুলতে, আবার কেউ ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ আবার থলে বা প্যাকেটে করে খাবার নিয়ে এসে কবুতরের সামনে খাবার ছিটাচ্ছেন। ছোট ছোট বাচ্চারাও কবুতরের পিছনে পিছনে ছুটছেন, আনন্দ করছেন।
দীর্ঘদিন থেকে এ জালালী কবুতরের পরিচর্যায় রয়েছেন শাহজালাল (রঃ) দরগাহ শরীফের একাধিক খাদেম। দরগাহ্-এ হযরত শাহজালাল (রঃ) এর সরেকওম মোতাওয়াল্লী ফতেউল্লাহ্ আল আমান বলেন, নিজামুদ্দিন আওলিয়া (রঃ) কাছ থেকে পাওয়া একজোড়া কবুতর থেকে বংশ বৃদ্ধিতে বর্তমানে সমাদৃত সিলেটে ধর্মীয়, সাংষ্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত প্রতীক এই জালালী কবুতর। এ কবুতর সিলেটের শাহজালাল (রঃ) দরগাহের এক অবিচ্ছেদ অংশ হিসেবে টিকে রয়েছে। যা দরগাহ’র পবিত্রতা ও আধ্যাত্মিক অনুভূতির সাথে মিশে রয়েছে।
‘শঙ্কর জাতের সংখ্যা বাড়ছে আর অরজিনাল জালালী কবুতরের সংখ্যা কমছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুল জাত ও আসল রংয়ের জালালী কবুতরের সংখ্যা কমছে, রং বেরংয়ের শঙ্কর জাতের কবুতর বাড়ছে। দেশীয়সহ অন্যান্য জাতের সাথে মিলেই এ শঙ্কর জাতের তৈরি হয়েছে।
দৈনিক ইনাতগঞ্জ বার্তা/ ইকবাল
Leave a Reply